চট্টগ্রাম জেলার আলুবোখারার কিছু সম্ভাব্য কথন


চট্টগ্রাম জেলায় সর্বপ্রথম ব্যক্তিউদ্যোগে কাপ্তাইয়ে আলুবোখারার চাষ হয় এবং এতে সফলতাও অর্জন হয়।প্রাথমিক পর্যায়ে কাপ্তাইয়ে সফল হওয়ার পর ধারণা করা যায় চট্টগ্রামের মাটি ও আবহাওয়া আলুবোখারার চাষের জন্য উপযুক্ত।

আলু বোখারার বৈজ্ঞানিক নাম: Prunus – domestica. ইংরেজিতে : Plum অর্থাৎ ইউরোপীয় পাল্ম রোসাসে (Rosaceae) পরিবারের সপুষ্পক ফলজ উদ্ভিদের একটি প্রজাতি।

এটি একটি পর্ণমোচী বৃক্ষ, ইংরেজিতে প্লাম হিসাবে পরিচিত, যদিও সমস্ত প্লাম এই প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত নয়। গ্রিনেজেজ এবং মনাক্কা P. domestica উপ-প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। এই সংকর প্রজাতিটি Prunus spinosa এবং Prunus cerasifera.থেকে সৃষ্টি।

বিশ্ব জুড়ে কাটিংকা, ফ্লাউমেন, হানিটা, আওয়াবাখার, প্রেজেন্টাসহ নানা নামে পরিচিত কিন্তু এই ফলটিকে বাঙালিরা চেনেন আলুবোখারা হিসেবে। সারা বিশ্বে মোট দুই হাজার প্রকারের আলুবোখারা পাওয়া যায়।

বর্তমানে চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ের পাহাড়ে উৎপাদিত হচ্ছে ইরানের বিখ্যাত ফল আলু বোখারা। মসলা জাতীয় ফল আলু বোখারার চাষ ও উৎপাদনে সাফল্য দেখিয়েছে কাপ্তাইয়ের নারাণগিরিস্থ রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র।কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে কৃষি বিজ্ঞানীদের সফল গবেষণায় তিন বছর বয়সী গাছে আলু বোখারা ধরতে শুরু করেছে।

আলু বোখারা হচ্ছে মূলত ইরানি একটি ফল। এই ফলটি ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই ফলের উৎপাদন এই প্রথম।

ছোট, লম্বাটে ফলটিতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন ও আঁশ, যা একজন সুস্থ মানুষের শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন। বিশেষ করে আলুবোখারায় যথেষ্ট পরিমাণে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন A, B, C এবং E রয়েছে।

আলু বোখারা মূলত ব্যবহার করা হয় পোলাও, বিরিয়ানি, রোস্ট, সালাদ, জ্যাম, জ্যালি, আচার এবং বোরহানিসহ নানা অভিজাত খাবার তৈরিতে।আমাদের দেশে এ ফলটি মূলত ভারত থেকে আমদানি করা হয়।পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দার্জিলিংয়ে আলু বোখারার চাষ হয়। তবে ব্যাপক ভাবে চাষ হয় ইরান, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে।

বর্তমানে এই ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদনে কৃষি গবেষকরা কাজ করছেন বলে জানান রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।একই কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, ইরান থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আলু বোখারার বীজ এনে রাইখালীতে ক্ষুদ্রপরিসরে চারা উৎপাদন করা হয়।

প্রাথমিক গবেষণায় মনে হয়েছে, কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি মাটিতে আলু-বোখারার সফল চাষাবাদ সম্ভব। এ ফলটি অভিজাত এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি দাম বেশি থাকায় বাণিজ্যিক উৎপাদনে কৃষকরা অনেক বেশি লাভবান হবেন।

আসুন আলু বোখারার কিছু উপকারিতা জেনে নিই-

আলুবোখারায় রয়েছে প্রাকৃতিক ল্যাক্সোটিভ ও বাধ্যক্য বিরোধী গুণাগুণ যা সারা বিশ্ব জুড়ে আজ সমাদৃত। তাজা বা শুকনো যায় হোক না কেন এই ফলটি তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।

আলু বোখারা নার্ভের জন্য খুবই উপকারী।মানসিক চাপ দূর করতে ও সহায়তা করে।স্বাস্হ্য সচেতনদের জন্য আলুবোখারা খুব উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে আলু বোখারার জুড়ি মেলা ভার।

প্রতি ১০০ গ্রাম আলুবোখারায় রয়েছে মাত্র ৫০ গ্রাম ক্যালরি।

আলু বোখারা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যান্সার প্রতিরোধে ও সহায়তা করে।আলু বোখারা ত্বকে বয়সের বলিরেখা ফুটে উঠতে দেয় না সহজে। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।ওজন কমাতে ও সহায়তা করে এবং কমানো ওজন ধরে রাখে।

গবেষণায় জানা যায়, মানুষ কষ্ট করে ওজন কমানোর পর শিগগিরই তা ফিরে পায়। তবে খাবারের তালিকায় আলু বেখারা যুক্ত হলে মানুষের স্থুলতা শুধু কমবেই না তা ধরে রাখতেও সহায়ক হবে।

ব্যাপক পরিসরে আলুবোখারার চাষ বেকারত্ব দূরীকরণ সহ দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।ই-কমার্সে ও রাখতে পারে অনন্য অবদান।

Post a Comment

0 Comments