বাবুগঞ্জে নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে ভাতার টাকা উধাও!

বরিশালের বাবুগঞ্জে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির টাকা, বিশেষ করে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের টাকা ‘নগদ’ একাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে।

একাউন্ট হ্যাক করে কে বা কাহারা হতদরিদ্রদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। এঘটনায় বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী এয়ারপোর্ট ও বাবুগঞ্জ থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি / লিখিত অভিযোগ করেছেন। কেউ কেউ সমাজসেবা অফিসে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া টাকার হদিস খুঁজছেন।

নগদ প্রতারনার হাত থেকে সাধারণ জনগনকে রক্ষা করতে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় বাবুগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয় দ্রুত সচেতনতামূলক মাইকিং এর ব্যবস্থা করেছেন। বুধবার দিনভর উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে মাইকিং করে হ্যাকারদের ব্যপারে সচেতন করা হয়েছে।

এছাড়া একই দিন সমাজসেবা কর্মকর্তা (অ.দা.) আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ সকল জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে ভাতাভোগীদের নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতারক চক্র টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ভাতার ভোগীকে প্রলোভন দেখিয়ে ওটিপি নম্বর নিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। উপজেলা জুরে প্রতারক চক্র রুখে দিতে সবাইকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করার অনুরোধ জানানো হয় ওই চিঠিতে।

উল্লেখ্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হ্যাক করার পর এবার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির কোটি টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র।

কিন্তু এ দায় নগদ ও সমাজসেবা অধিদপ্তরের কেউ কাঁধে নিতে না চাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের শত শত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে বাবুগঞ্জে প্রাথমিকের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়া হয়। সেই টাকা আজও উদ্ধার হয়নি। শনাক্ত করা যায়নি প্রতারক চক্রকে।

প্রতারকদের প্রাথমিকের মিশন সফল হওয়ার পর তাদের নজর পড়ে সমাজসেবার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রদেয় শিক্ষা উপবৃত্তি, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধি ভাতার ওপর।

উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের আলাউদ্দিন রাজ এয়ারপোর্ট থানায় দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরিতে অভিযোগ করেন, তার নগদ একাউন্টে ভাতার ৬৫০০ টাকা ছিলো। একটি প্রতারক চক্র ফোন করে ভূল বুজিয়ে তার একাউন্টের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নগদ একাউন্ট চেক করে দেখেন তার টাকা কে বা কারা হ্যাক করে তুলে নিয়েছে।

দেহেরগতি ইউনিয়নের ইউনিয়নের দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামের মো. এনায়েত শরিফ(৫৩) বাবুগঞ্জ থানায় ২৪ এপ্রিল দায়েরকৃত ৯৮৩ নম্বর সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন যে, তার মোবাইলে নগদ অফিসের পরিচয়ে একব্যক্তি ফোন দিয়ে বলে আপনার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা একাউন্টে পাঠানো হবে। দয়া করে আপনার মোবাইলে প্রেরিত কোড নম্বরটি বলেন। কোড নম্বর বলার সাথে সাথে তার নগদ একাউন্টে থাকা ২২৮৫ টাকা উধাও হয়ে যায়। এভাবে অনেকের টাকা হ্যাক করে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন চাঁদপাশা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন রাড়ী ও দেহেরগতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান ।

রাকুদিয়া এলাকার শহিদ হাওলাদার জানান, অহসায় প্রতিবন্ধী হিসেবে তিনি প্রতিমাসে ভাতা পেয়ে আসছেন। এবারের ভাতার টাকায় ঈদের কেনাকাটা করবেন বলে ভেবে রেখেছিলেন। কিন্ত প্রতারক চক্র একাউন্ট হ্যাক করে সব টাকা তুলে নিয়েছে। এ ঘটনায় তিনি ২৪ এপ্রিল বাবুগঞ্জ থানায় একটি জিডি (যার নং ৯৮১) করেছেন।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা বলেন, উন্নত তথ্য প্রযুক্তির যুগে হ্যাকারদের চিহ্নিত করা কি খুব কঠিন কাজ? তাহলে কেনো টাকা উদ্ধার হচ্ছে না। এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে কারা জড়িত? তারতো এলিয়েন নয়,এই পৃথিবীরই মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বয়স্ক,বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের দেয়া ভাতার টাকা এত সহজে হজম করবে প্রতারক চক্র ধরা ছোয়ার বাইরে থেকে! এঘটনায় সরকারের কঠোরতা সময়ের দাবী।

সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, সার উপজেলা থেকে এরকম শত শত অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তাদের কোনো সহায়তা দিতে পারছেন না তারা। ভাতার টাকা উপজেলা থেকে পে-রোল দেওয়া হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভাতার টাকাটা নগদের মাধ্যমে ভাতাভোগীদের মোবাইলে পাঠানো হয়। নগদ হ্যাক করে টাকা নিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। অধিকাংশ ভাতাভোগীদের কাছে’09638645156′ এই ধরনের নম্বর থেকে ফোন আসে।

বর্তমানে অভিযোগ পাচ্ছি যে, কোন ধরনের ফোন কল না দিয়েই সুবিধাভোগীদের নগদ পিন কোড পরিবর্তন করে টাকা তুলে নিচ্ছে। এই প্রতারক চক্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চিহৃিত করে আইনের আওতায় আনা উচিত।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ভাতাভোগীর সংখ্যা ১৬ হাজার জন। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী -২৪০০জন , বিধবা-৩৯২৬জন , বয়স্ক-৯০৮৪জন ভাতাভোগী নগদের মাধ্যমে ভাতা পাচ্ছেন।

তবে এদের মধ্য থেকে কতজনে টাকা হ্যাক করে নেয়া হয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ‘নগদ’র নিজস্ব কোনো দক্ষ কর্মী দিয়ে ভাতাভোগীদের একাউন্ট করেনি, করেছে পার্টটাইম কর্মীরা। একাউন্ট খোলার পর গোপন পিন নাম্বার ওই পার্টটাইম কর্মীদেরই জানা ছিলো। দেশের সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারাই এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে সমাজসেবার মাঠকর্মীদের ধারণা। এছাড়া তার মনে করে নগদ এর কাছে মোবাইল নম্বর সহ ভাতাভোগীদের তালিকা রয়েছে। তারা চেষ্টা করলে হয়তো এর একটা সুরহা হতো।

বাবুগঞ্জ থানার ওসি বলেন, একাধীক ভুক্তভোগী থানায় সাধারণ ডায়রি করেছে। আমরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধীদের সনাক্তের চেষ্টা করছি।

বাবুগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.আবুল কালাম আজাদ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বলেন, আমরা সচেতনতা মূলক প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছি। হ্যাকের বিষয়টি উর্দ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। প্রতিদিন অফিসে শতশত লোক এরকম অভিযোগ নিয়ে ভীর করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমীনুল ইসলাম বলেন, ভাতাভোগীরা অধিকাংশেরই তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারনা কম। তাই তার প্রতারনার শিকারের ঝুঁকি বহন করে তুলনামূলক বেশি। এসব সহজ সরল মানুষের সহযোগিতা উপজেলা প্রশাসন সবসময় করে আসছে। প্রতারণার হাত থেকে ভাতাভোগীদের বাঁচাতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিংসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

The post বাবুগঞ্জে নগদ অ্যাকাউন্ট থেকে ভাতার টাকা উধাও! appeared first on Techzoom.TV.

Post a Comment

0 Comments