অনিয়মের সম্রাট আতিকুলই হাই-টেক পার্কের প্রতিনিধি

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং এ বিভাগের আওতাধীন সংস্থাসমূহের ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলো মূল্যায়নের জন্য কমিটি গঠন করেছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। কমিটিতে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উপপরিচালক আতিকুল ইসলামকে। মঙ্গলবার হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফরউল্লাহ এই মনোনয়ন দেন। তবে নিয়োগে অনিয়ম, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয়, বিধি লঙ্ঘন করে প্রকল্পের দরপত্র মুল্যায়ন কমিটির আহবায়ক হওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিতর্কিত আতিকুল ইসলাম। ফলে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটিতে তার মনোয়ন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইসিটি বিভাগের আওতাধীন সংস্থার কর্মকর্তারা।

জানা যায়, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ গঠনের আগে আরেক স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) আওতাধীন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কালিয়াকৈরে গড়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি। সে প্রকল্পে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করেন আতিকুল ইসলাম। স্বায়ত্তশাসিত সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষে ২০১১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১১ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারসহ ১৪টি পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সার্কুলার জারি করে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। প্রার্থীদের বয়স চাওয়া হয় সর্বোচ্চ ৩০ বছর। শিক্ষা সনদ অনুযায়ী ওই সময় আতিকুল ইসলামের বয়স ছিল ৩০ বছর ১০ মাস ১৬ দিন। সার্কুলারের দুই নম্বর শর্তে বলা হয়, ১ থেকে ৬ পর্যন্ত পদে বিভাগীয় অর্থাৎ কোটা আছে এমন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৩২ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। তবে কোনো কোটা না থাকা সত্ত্বেও বয়স শিথিলকরণ বিধিমালা দেখিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় আতিকুলকে। অথচ বিসিসি বা অন্য কোনো স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মীকে হাই-টেক পার্কে নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলকরণ বিধিমালা প্রযোজ্য হতে পারে এমন কোনো কথা হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নিয়োগ বিধানে নেই।

আতিকুল ইসলাম বর্তমানে ২০২২ সালে শুরু হওয়া শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) দায়িত্বে আছেন। প্রায় ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের পিডি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই তিনি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) এবং ই-জিপি গাইডলাইন ভঙ্গ করে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক বনে যান।সে সময় প্রকল্পের নোটশিটে বলা হয়, ১৪ আইটি প্রকল্পে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এবং ই-জিপি গাইডলাইনের আলোকে প্রকল্প পরিচালককে আহ্বায়ক, উপ-প্রকল্প পরিচালককে সদস্যসচিব এবং আইসিটি বিভাগের একজন প্রতিনিধিকে সদস্য হিসেবে নিয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রস্তাব উত্থাপন করা হলো।

তবে পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ১০ অনুযায়ী ওই কমিটির প্রধান হওয়ার কথা ছিল হাই-টেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। সে সময় নোটশিটে আইনের ব্যত্যয় উল্লেখ করে কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাবও করেন উপ-প্রকল্প পরিচালক। তবে বিধি লঙ্ঘন করেই অনুমোদন পায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। অভিযোগ আছে হাই-টেক পার্কের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ম্যানেজ করে নিজেই কমিটির আহ্বায়ক বনে যান আতিকুল ইসলাম। হাই-টেক পার্ক সূত্র বলছে, মূলত টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ এবং প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করতেই পিডি হন আতিকুল ইসলাম।

হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে আরও জানা যায়, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের আগে অন্তত পাঁচটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও উপ-প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন আতিকুল। প্রতিটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পরপরই প্রভাব খাটিয়ে তিনি অন্য প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। আগে কাজ করা প্রতিটি প্রকল্পেই তার নামে লুটপাট ও অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে। তার কারণে বেশ কয়েকটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এর আগে আইসিটি বিভাগে আতিকুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের কারণে আইসিটি বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে দিয়ে তদন্ত করা হয়। তবে ফলাফল ছাড়াই তদন্ত শেষ হয়ে যায়। আইসিটি বিভাগের বিভিন্ন টেন্ডারে অনিয়ম করে আসা আতিকুলের সিন্ডিকেট তাকে এই তদন্ত থেকেও বাঁচিয়ে দেয় বলে বিভিন্ন ঠিকাদার গণমাধ্যমে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন।

The post অনিয়মের সম্রাট আতিকুলই হাই-টেক পার্কের প্রতিনিধি appeared first on Techzoom.TV.

Post a Comment

0 Comments