ক্যামেরা ছাড়াই ওয়াই-ফাই সিগন্যালে শনাক্ত হবে মানুষ, নতুন প্রযুক্তি ‘হু-ফাই’

ক্যামেরা বা মাইক্রোফোন ছাড়াই এবার মানুষকে শনাক্ত ও অনুসরণ করা সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সাধারণ ওয়াই-ফাই সংকেতকে বায়োমেট্রিক স্ক্যানারে রূপান্তর করতে সক্ষম এক যুগান্তকারী প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন গবেষকরা, যার নাম দেওয়া হয়েছে হু-ফাই (Hu-Fi)। প্রযুক্তিটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে থাকলেও এটি ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

অনলাইন গবেষণা প্ল্যাটফর্ম আর্কাইভে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হু-ফাই প্রযুক্তি ২.৪ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের সাধারণ ওয়াই-ফাই সিগন্যাল ব্যবহার করেই একটি নির্দিষ্ট স্থানে মানুষের উপস্থিতি এবং তার গতিবিধি নির্ভুলভাবে শনাক্ত করতে পারে। এর মূলে রয়েছে একটি ট্রান্সফরমার-ভিত্তিক নিউরাল নেটওয়ার্ক, যা অনেকটা চ্যাটজিপিটির মতো লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলের (LLM) মতোই কাজ করে।

কীভাবে কাজ করে হু-ফাই?

যখন কোনো ব্যক্তি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের আওতায় হাঁটাচলা করে, তখন তার শরীর থেকে প্রতিফলিত সিগন্যালের গতি ও শক্তিতে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে প্রতিটি মানুষের জন্য একটি স্বতন্ত্র প্যাটার্ন বা স্বাক্ষর (Unique Pattern) তৈরি হয়। হু-ফাই সিস্টেম এই প্যাটার্নকে মানুষের আঙুলের ছাপ বা চোখের রেটিনার মতোই একটি বায়োমেট্রিক স্বাক্ষর হিসেবে ব্যবহার করে ব্যক্তিকে শনাক্ত করে।

গবেষণায় দেখা গেছে, একবার এই সিস্টেম কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করলে, ওই ব্যক্তি দীর্ঘ সময় পর একই স্থানে ফিরে এলেও তাকে নির্ভুলভাবে চিনতে পারে।

হু-ফাই এর ক্ষমতা ও নির্ভুলতা

গবেষণায় হু-ফাই প্রযুক্তির কিছু বিস্ময়কর ক্ষমতা উঠে এসেছে:

  • দেয়ালের ওপাশেও শনাক্তকরণ: কোনো ব্যক্তি দেয়ালের অন্য পাশে স্বাভাবিক গতিতে হাঁটলেও তাকে ৯৫.৫ শতাংশ নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে সক্ষম হু-ফাই।
  • একাধিক ব্যক্তিকে অনুসরণ: এটি একসঙ্গে নয়জন পর্যন্ত ব্যক্তিকে আলাদাভাবে শনাক্ত ও অনুসরণ (ট্র্যাক) করতে পারে।
  • ছদ্মবেশে বিভ্রান্ত হয় না: ব্যক্তি পোশাক পরিবর্তন করলে বা পিঠে ব্যাগ নিলেও এই প্রযুক্তি তাকে শনাক্ত করতে ভুল করে না।
  • অদৃশ্য ও গোপনীয়: হু-ফাই কোনো ইনফ্রারেড, রাডার বা দৃশ্যমান আলো ব্যবহার করে না। এটি প্যাসিভ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (আরএফ) সেন্সিং ব্যবহার করায় গোপনে কাজ করতে পারে এবং সহজে ধরা পড়ে না।
  • ইশারা ভাষা শনাক্তকরণ: এটি শরীরের নড়াচড়া বিশ্লেষণ করে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বা ইশারা ভাষাও শনাক্ত করতে পারে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি চালনার জন্য একটি সাধারণ ওয়াই-ফাই ট্রান্সমিটার এবং তিনটি অ্যান্টেনা-যুক্ত রিসিভারই যথেষ্ট, যা এটিকে অত্যন্ত সাশ্রয়ী করে তুলেছে।

প্রযুক্তিটি এখনো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার শুরু না হলেও, এর কার্যকারিতা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অদৃশ্য নজরদারি প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় নতুন এবং শক্তিশালী আইন প্রণয়ন করা অপরিহার্য হয়ে উঠবে।

The post ক্যামেরা ছাড়াই ওয়াই-ফাই সিগন্যালে শনাক্ত হবে মানুষ, নতুন প্রযুক্তি ‘হু-ফাই’ appeared first on Techzoom.TV.

Post a Comment

0 Comments