দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চলমান তদন্তকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) একটি বিতর্কিত প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের কাছ থেকে সরঞ্জাম আমদানির জন্য সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক বিশেষ সহকারীর বিরুদ্ধে এই তৎপরতার অভিযোগ ওঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
দুদকের স্পষ্ট আপত্তি সত্ত্বেও তড়িঘড়ি করে সরঞ্জাম আমদানির এই উদ্যোগে প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্তাধীন একটি বিষয়ে এ ধরনের নির্বাহী হস্তক্ষেপ আইনের শাসনের পরিপন্থী এবং এটি দুর্নীতিকে উৎসাহিত করার শামিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তদন্তাধীন একটি প্রকল্পে এভাবে নির্বাহী হস্তক্ষেপ শুধু নজিরবিহীনই নয়, এটি সুশাসনের নীতিকে সরাসরি লঙ্ঘন করে এবং দুর্নীতির পথকে প্রশস্ত করে।
যেভাবে অনিয়মের শুরু
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘ফাইভ-জি রেডিনেস’ প্রকল্পের দরপত্র প্রক্রিয়ায় গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। সে সময় কারিগরি শর্ত পূরণ না করা সত্ত্বেও হুয়াওয়েকে কাজ দেওয়া হয়। তৎকালীন বিটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরী আইন মেনে পুনরায় দরপত্রের সিদ্ধান্ত নিলে তাকে চাপ প্রয়োগ করে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রকল্পের কেনাকাটা আটকে দিয়ে দুদককে তদন্তের ভার দেয়।
তদন্তের মধ্যে নতুন তৎপরতা
দুদকের অনুসন্ধান চলমান থাকা অবস্থাতেই প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে তৎপর হন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে কেনাকাটার পক্ষে ইতিবাচক মতামত দেওয়ার অনুরোধ করেন। দুদক সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ক্রয় আইনে লঙ্ঘন পাওয়া গেছে এবং এ অবস্থায় কেনাকাটা আইনসিদ্ধ হবে না।
এরপরেও কারখানা পরিদর্শন ছাড়াই সরঞ্জাম জাহাজীকরণের জন্য ফয়েজ আহমদের নির্দেশনা অনুযায়ী হুয়াওয়েকে চিঠি দেওয়া হয়। সেই সুযোগে হুয়াওয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশের উদ্দেশে সরঞ্জাম পাঠিয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আইনি ও আর্থিক ঝুঁকি
এই পরিস্থিতিতে বিটিসিএল মারাত্মক আইনি ও আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সরঞ্জাম গ্রহণ করলে তারা একটি অবৈধ প্রক্রিয়াকে বৈধতা দেবে, যা রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় ও দুর্নীতির শামিল। অন্যদিকে, সরঞ্জাম গ্রহণ না করলে হুয়াওয়ের সঙ্গে আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রকল্পের অর্থ ছাড়ের দায়িত্বে থাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষও দুদকের তদন্তের কারণে অর্থ ছাড় করতে দোটানায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেন, ‘তদন্তাধীন একটি প্রকল্পে কোনো সরকারি কর্মকর্তার এ ধরনের হস্তক্ষেপ স্পষ্টতই স্বার্থের সংঘাত এবং ক্ষমতার অপব্যবহার। এটি অতীতের লুটপাটভিত্তিক প্রশাসনিক সংস্কৃতিরই প্রতিফলন। সরকারের উচিত অবিলম্বে একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে পুরো প্রকল্পটি পর্যালোচনা করা, অন্যথায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান কেবল কথার কথা হিসেবেই প্রমাণিত হবে।’
The post তদন্ত উপেক্ষা করে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম আমদানির চাপ, বিটিসিএলের প্রকল্পে দুর্নীতির নতুন শঙ্কা appeared first on Techzoom.TV.
0 Comments