বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) নিয়োগ ও পদোন্নতিতে বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। তিনটি পৃথক তদন্ত প্রতিবেদনে অন্তত দুই ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ, পদোন্নতি এবং প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
এই প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ‘বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ (ওএসডি) এবং তাদের স্বাক্ষরের ক্ষমতা (সাইনিং পাওয়ার) প্রত্যাহারের জন্য বিটিআরসিকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা সত্ত্বেও বিটিআরসি এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, যা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির ভেতরে ও বাইরে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
তদন্তে যা বেরিয়ে এলো
বিটিআরসির বিভিন্ন সময়ের কার্যক্রম নিয়ে গঠিত তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য তুলে ধরেছে।
- নিয়োগে অনিয়ম: ২০০৯ সালে নিয়োগ পাওয়া ২৯ জন কর্মকর্তার মধ্যে অন্তত ১৫ জনের নিয়োগে অনিয়ম পাওয়া গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
- অবৈধ পদোন্নতি: উপপরিচালক থেকে পরিচালক পদে পদোন্নতি পাওয়া এয়াকুব আলী ভূইয়া, আফতাব মো. ওয়াদুদ এবং এম এ তালেব-এর পদোন্নতি নিয়মবহির্ভূত ছিল বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
- শৃঙ্খলা ভঙ্গ: লাইসেন্সিং শাখার মহাপরিচালক আশীষ কুমার কুন্ডুর বিরুদ্ধে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব করা, উপপরিচালক আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে যোগ্যতাহীন নিয়োগ এবং আরেক উপপরিচালক শারমিন সুলতানার বিরুদ্ধে অনুমতি ছাড়া বিদেশ ভ্রমণের প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
- কর্তব্যে অবহেলা: বিভাগীয় তদন্তে দণ্ড পাওয়ার পরও পরিচালক এয়াকুব আলীকে স্বপদে বহাল রাখায় প্রশাসন বিভাগের মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুনকে কর্তব্যে অবহেলার জন্য দায়ী করা হয়েছে। কমিটি তাকে বিটিআরসি থেকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।
এছাড়াও, ১৭ জন ড্রাইভার নিয়োগ এবং প্রকল্পে কর্মরত ২৫ জনকে বয়স ছাড় দিয়ে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় ‘বিটিআরসির চাকরি প্রবিধানমালা-২০০৯’ লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশনা ও বিটিআরসির অবস্থান
তিনটি কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে গত ৩০ জুলাই ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া কর্মকর্তাদের অবিলম্বে ওএসডি করে তাদের স্বাক্ষরের ক্ষমতা প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়। শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে চিঠিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকায় কিছুটা অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।
এই বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান, মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাটি আমরা পেয়েছি। আগামী কমিশন সভায় এটি উত্থাপন করা হবে এবং সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, মন্ত্রণালয়ের তদন্তে বিটিআরসির কোনো প্রতিনিধি ছিল না, তাই বিটিআরসি প্রয়োজনে পৃথকভাবেও তদন্ত করতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় টেলিযোগাযোগ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই নিয়ন্ত্রক সংস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ের এই কঠোর পদক্ষেপের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন দেখতে চায় সংশ্লিষ্ট মহল।
The post বিটিআরসিতে নিয়োগ-পদোন্নতিতে বড় ধরনের অনিয়ম, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ওএসডির নির্দেশ appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments