ব্যবহৃত বা সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোনের বাজার দ্রুত বাড়ছে। ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত স্মার্টফোন বাজারের আকার ৫ হাজার ৩৫৫ কোটি ডলারে পৌঁছবে এবং ২০৩৪ সালের মধ্যে তা প্রায় চার গুণ বেড়ে ১৯ হাজার কোটি ডলার ছাড়াবে। বাজার গবেষণা সংস্থা মার্কেট রিসার্চ ফিউচারের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কম দামে টেকসই ও প্রিমিয়াম ফোন কেনার চাহিদা মূলত ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বাজারকে এগিয়ে নিয়ে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মানুষ অর্থনৈতিক সংকট বা খরচের চাপের কারণে দামি ডিভাইস কিনতে পারছে না। তাই মান বা কার্যকারিতা বিবেচনা করে তারা সাশ্রয়ী, কম দামের ডিভাইসকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার উদ্বেগের কারণে ইলেকট্রনিক পণ্য পুনর্ব্যবহার ও রিসাইক্লিংয়ের প্রচলন বেড়েছে, যা ব্যবহৃত স্মার্টফোন শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।
সিসিএস ইনসাইটের বিশ্লেষক কেইন ম্যাককেনা বলছেন, ‘ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বাজার এরই মধ্যে নতুন ডিভাইসের বাজারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ শীর্ষ আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড থেকে আরো উন্নত পণ্য বাজারে আসছে।’
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের বেশকিছু অঞ্চলে বড় জনসংখ্যা এবং মূল্য সচেতন গ্রাহকের কারণে ব্যবহৃত ডিভাইসের গুরুত্ব বাড়ছে। পাশাপাশি ই-কমার্স প্লাটফর্ম ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের বিস্তারে এ বাজারে ক্রেতার প্রবেশ আরো সহজ হয়েছে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট টেকরাডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যবহৃত স্মার্টফোন বাজারের প্রবেশ করা প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পণ্য আসে মোবাইল অপারেটর, অ্যাপল বা স্যামসাংয়ের কাছ থেকে। তবে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, সবচেয়ে বেশি সেকেন্ড হ্যান্ড স্মার্টফোন বিক্রি হয় ই-বে বা অ্যামাজনের মতো রিসেলার বা অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকদের তথ্যানুযায়ী, ভোক্তা চাহিদার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও উদ্ভাবন ব্যবহৃত স্মার্টফোন বাজারের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। নতুন নতুন স্মার্টফোন ও ফিচারের কারণে একটি মডেল দ্রুতই পুরনো হয়ে যায়। অ্যাপল কিংবা স্যামসাং বছর বছর নতুন সব সুবিধা নিয়ে একাধিক মডেল উন্মোচন করছে। ফলে অনেকেই ফোন কিংবা মডেল পরিবর্তন করছেন। এতে বাজারে ব্যবহৃত ফোনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
উন্নত ক্যামেরা, দ্রুততর প্রসেসর ও বড় ডিসপ্লের মতো বৈশিষ্ট্য ব্যবহৃত স্মার্টফোনকে ভোক্তাদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলছে। এছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও মেশিন লার্নিং (এমএল) প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নত রিফারবিশমেন্ট বা মেরামত পদ্ধতি তৈরি হচ্ছে, যা ব্যবহৃত স্মার্টফোনের গুণমান ও কর্মক্ষমতা বাড়াচ্ছে এবং বাজারের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করছে।
প্রায় ২০ বছর আগেও ক্যামেরা, জিপিএস, স্লাইড বা ফ্লিপ, টাচস্ক্রিন, এনএফসি ও ওয়াটারপ্রুফিংয়ের মতো ফিচারসহ ফোনে সাধারণভাবে পাওয়া যেত না। ফলে নতুন ফিচারের সুবিধা পেতে নতুন ফোনে আপগ্রেড করাও জরুরি ছিল না। আর তখন ব্যবহৃত ফোনের বাজারও তেমন শক্তিশালী ছিল না, কারণ পুরনো ফোন মানে পুরনো প্রযুক্তি।
এদিকে স্যামসাং, অ্যাপল ও গুগল নিজেদের স্মার্টফোনে বছরের পর বছর ফার্মওয়্যার, সিকিউরিটি এবং অপারেটিং সিস্টেম আপডেট করে আসছে। ফলে পুরনো ফোনগুলোয়ও সর্বশেষ সফটওয়্যার হালনাগাদ থাকে।
টিএমটি ফার্স্টের প্রতিবেদন বলছে, ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বাজার এখন অত্যন্ত সক্রিয় এবং বছর বছর বাড়ছে। অনেক নতুন ফোনের দাম সাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের অনেক দেশের ভোক্তারা ব্যবহৃত ফোনকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে।
The post বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত স্মার্টফোনের বাজার এক দশকে বাড়বে প্রায় চার গুণ appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments