সরকারি নিয়ন্ত্রিত আইসিটি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্ক (বিডিরেন) ট্রাস্টের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) ফারুক আলি তরফদারের বিরুদ্ধে অভিজ্ঞতা সনদ জাল করে চাকরি নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ১৫ বছরের অভিজ্ঞতার পরিবর্তে মাত্র ছয় বছরের অভিজ্ঞতাকে জালিয়াতির মাধ্যমে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে তিনি চাকরিটি বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নিয়োগে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছিল বলেও জানা গেছে।
চাকরিতে যোগদানের পর থেকেই ফারুক আলি তরফদারের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার ব্যাটারি বিনা টেন্ডারে বিক্রি, ৩৫ কোটি টাকায় অফিসের ফ্লোর কেনা এবং প্রতিষ্ঠানের তহবিল থেকে সুদবিহীন ঋণ নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনাসহ একের পর এক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে।
সনদ জালিয়াতির অভিযোগ
বিডিরেন ২০১৮ সালের শেষে সিএফও সহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সিএফও পদের জন্য ন্যূনতম ১৫ বছরের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা চাওয়া হলেও, ফারুক আলি তরফদারের প্রকৃত অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ছয় বছরের।
তার কর্মজীবনের বিবরণে দেখা যায়, তিনি চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ১০-১২ বছর কর্মরত থাকলেও, অভিজ্ঞতা সনদে সেই সময়কালকে ‘অ্যাকাউন্টস কো-অর্ডিনেটর’ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে একজন কর্মকর্তা জানান, ফারুক আলী সেখানে দুই মেয়াদে মাত্র চার বছর অ্যাকাউন্টস কো-অর্ডিনেটর পদে ছিলেন। বাকি অভিজ্ঞতা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে দেখানো হয়েছে। অভিযোগ, এই সব অভিজ্ঞতাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি চাকরিটি পান।
নিয়োগের পর একের পর এক দুর্নীতি
আর্থিক অনিয়ম ও অডিট ফাঁকি: অভিযোগ রয়েছে, বিডিরেনের কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেনে কোনো স্বচ্ছতা নেই এবং বিগত কয়েক বছর ধরে কোনো সরকারি অডিট করানো হয়নি। অনিয়ম ধামাচাপা দিতে ফারুক আলী নিজের পরিচিত অডিট ফার্ম দিয়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করিয়েছেন। তবে তার দাবি, দীর্ঘসূত্রতার কারণে সরকারি অডিট হয়নি।
অফিস কেনায় দুর্নীতি: রাজধানীর তেজগাঁওয়ের নাভানা এইচআর টাওয়ারে ৩৫ কোটি টাকায় একটি ফ্লোর কেনা হয়, যেখানে একই ভবনের অন্য ফ্লোরের মূল্য সর্বোচ্চ ২২ কোটি টাকা। অভিযোগ, একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই ফ্লোর ক্রয়ে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে ভাগবাটোয়ারা করেছে। এ বিষয়ে ফারুক আলী দাবি করেন, “সবকিছু ব্যাংকের মাধ্যমে করা হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।”
তহবিলের অপব্যবহার: প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের জন্য গঠিত এন্ডোমেন্ট ফান্ড থেকে ৮০ কোটি টাকা সুদবিহীন ঋণ নিয়ে ফারুক আলিসহ চার কর্মকর্তা ব্যক্তিগত গাড়ি কিনেছেন। শুধু তাই নয়, সেই গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ অফিস থেকে তারা প্রত্যেকে মাসে ৩৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছেন।
অবৈধ পদোন্নতি: অর্গানোগ্রাম অনুমোদন ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ও বোনাস বিতরণ করা হয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
গড়ে তুলেছেন বিপুল সম্পদ
বিভিন্ন সূত্র জানায়, দুর্নীতির মাধ্যমে ফারুক আলি তরফদার ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, জমি এবং বিলাসবহুল গাড়িসহ বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এই (একাধিক) অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একজন সদস্য বলেন, “বিডিরেনের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, যা ইউজিসির সদস্যদের কাছেও এসেছে।” তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে রাজি হননি। ইউজিসির চেয়ারম্যানের সাথেও এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।
The post বিডিরেনের সিএফও ফারুকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির পাহাড়: নিয়োগ জালিয়াতি থেকে অর্থপাচার appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments