বর্তমান ২০২৫ সালে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে 5G নেটওয়ার্কের যুগ, আর এর সঙ্গে বদলে যাচ্ছে স্মার্টফোনের দুনিয়া। ২০২৫ সালে দেশের মোবাইল মার্কেটে পাওয়া যাচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী 5G নেটওয়ার্ক সমৃদ্ধ স্মার্টফোন। Samsung, Apple, Xiaomi, OnePlus সহ শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের বাজারে এনেছে এমন সব স্মার্টফোন, যেগুলো গতি, পারফরম্যান্স আর প্রযুক্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এখনই সঠিক সময় নিজের পছন্দের 5G স্মার্টফোনটি বেছে নেওয়ার।
কেন ২০২৫ সাল হবে বাংলাদেশে 5G যুগের সূচনা?
বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে 5G নেটওয়ার্কের যুগ। ২০২৫ সালকে দেশটির টেলিকম খাতের নতুন মাইলফলক বলা হচ্ছে। দীর্ঘ প্রস্তুতি, নীতিগত সংস্কার এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের পর অবশেষে এই বছর থেকেই চালু হলো দেশের প্রথম বাণিজ্যিক 5G সেবা।
বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) ২০২২ সালে প্রায় ১৯০ MHz স্পেকট্রাম নিলামে ছাড়ে, যা 5G সেবার জন্য ভিত্তি তৈরি করে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি মেট্রোপলিটন এলাকায় Robi Axiata PLC ও Grameenphone Ltd. আনুষ্ঠানিকভাবে 5G সেবা চালু করে। নতুন “Telecommunications Network and Licensing Policy 2025” অনুমোদনের মাধ্যমে সরকার লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া সহজ করে, যাতে টেলিকম অপারেটর ও বিনিয়োগকারীরা দ্রুত নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে উৎসাহিত হয়।
তবে চ্যালেঞ্জও আছে। দেশে এখনও 5G-সক্ষম স্মার্টফোনের সংখ্যা তুলনামূলক কম। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে স্থানীয়ভাবে মাত্র ১.৭ লক্ষ 5G ফোন উৎপাদন হয়েছে, যা মোট উৎপাদনের মাত্র ১.২৯ শতাংশ।
তবু এই সূচনা বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। বিশেষজ্ঞদের মতে, 5G প্রযুক্তি শুধু ইন্টারনেটের গতি নয়, বদলে দেবে দেশের ব্যবসা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্মার্ট সিটি উদ্যোগের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা।

২০২৫ সালে বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্কের বর্তমান অবস্থা
২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্ক এখনো সীমিতভাবে চালু হয়েছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে বর্তমানে 5G কাভারেজ সবচেয়ে ভালোভাবে পাওয়া যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) জানিয়েছে, বছরের শেষের আগে অন্তত ৪০টি জেলা শহরে 5G পরিষেবা চালু করার লক্ষ্য রয়েছে।
এদিকে গ্রামীণফোন ও রবি ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের 3.5GHz ব্যান্ডে নেটওয়ার্ক টেস্ট করছে, এবং ফলাফল বেশ আশাব্যঞ্জক। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতের হাই-স্পিড মোবাইল ইন্টারনেট এই ব্যান্ডের ওপরই নির্ভর করবে। আরও ভালো খবর হলো, এখন মাঝারি দামের ফোন গুলোতেও স্থিতিশীল 5G কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে যেমনঃ Samsung Galaxy A34, Samsung Galaxy A35, Xiaomi Redmi Note 15 Pro Plus, OnePlus Nord CE 3 Lite 5G ইত্যাদি, যা দেশের ডিজিটাল উন্নয়নের গতি আরও এক ধাপ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।

5G নেটওয়ার্ক সাপোর্ট ও ব্যান্ড কম্প্যাটিবিলিটি
বাংলাদেশে 5G যুগের সূচনা হলেও এখনো অনেকের জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো তার হাতের স্মার্টফোনটি 5G সাপোর্টেড কি না? শুধু ফোনে 5G লেখা থাকলেই হবে না, সেটি দেশের নেটওয়ার্ক ব্যান্ডের সঙ্গে মেলানো আছে কিনা দেখা জরুরি।
বাংলাদেশে এখন মূলত n41 (2.5 GHz) এবং n78 (3.5 GHz) ব্যান্ডে 5G নেটওয়ার্ক চালু হয়েছে। এই ব্যান্ডগুলোকে মিড-ব্যান্ড 5G বলা হয়, যা শহরের এলাকায় দ্রুত স্পিড এবং কম ল্যাটেন্সি দেয়। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ইতিমধ্যে এই ব্যান্ডে অপারেটরদের পরীক্ষা এবং কমার্শিয়াল সেবা চালুর অনুমোদন দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ফোনগুলো n78 এবং n41 ব্যান্ড সাপোর্ট করে, সেগুলো বাংলাদেশে সবচেয়ে ভালো 5G পারফরম্যান্স দেবে। বর্তমানে Samsung, Apple, Xiaomi, OnePlus এবং Google Pixel-এর নতুন মডেলগুলো এই ব্যান্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অন্যদিকে বিটিআরসি ভবিষ্যতে আরও নিচু ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড যেমন 700 MHz বা 800/900 MHz চালুর পরিকল্পনা করছে, যাতে গ্রামীণ এলাকায়ও ভালো সিগন্যাল পাওয়া যায়। তাই এখন 5G ফোন কেনার সময় ব্যান্ড সাপোর্ট দেখে কেনাই smartest কাজ। শুধু ফোনে 5G লেখা থাকলেই হবে না, ব্যান্ড না মিললে নেটওয়ার্কের সুবিধা পুরোপুরি পাওয়া যাবে না।
প্রসেসর, ব্যাটারি ও হিট ম্যানেজমেন্ট
২০২৫ সালে বাংলাদেশে 5G নেটওয়ার্ক এখন সাধারণ মানুষের জন্য আরও বাস্তব হয়ে উঠেছে। তবে এই দ্রুত ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে স্মার্টফোনের প্রসেসর, ব্যাটারি এবং হিট ম্যানেজমেন্টের ভালো সমন্বয় থাকা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, Snapdragon 8 Gen 3 এবং Apple A18 Pro চিপসেট 5G নেটওয়ার্কে লো-ল্যাটেন্সি নিশ্চিত করে, যা গেমিং, ভিডিও স্ট্রিমিং এবং রিয়েল-টাইম অ্যাপ ব্যবহারকে মসৃণ ও স্থিতিশীল রাখে।
Premier and flagship category এর ফোনগুলো যেমন Samsung Galaxy S24 Ultra এবং iPhone 17 Pro Max এখন 5G ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত ব্যাটারি ড্রেইন সামলাতে সক্ষম। iPhone 16 Pro Max একবার চার্জে ১৮ ঘণ্টার বেশি ব্যবহার দেয়। বাজেট সেগমেন্টের ফোনগুলোও ভালো পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে, যেমন Xiaomi Poco M7 5G এবং Motorola G86 Power। Poco M7 5G-এর উন্নত কুলিং সিস্টেম গেমিং চলাকালীন ফোন ঠান্ডা রাখে, আর Motorola G86 Power-এর TurboPower চার্জিং দ্রুত চার্জ হওয়ার সময়ও হিট ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করে।
২০২৫ সালে বাংলাদেশের সেরা 5G স্মার্টফোনের তালিকা
| মডেল | ডিসপ্লে | প্রসেসর |
| Samsung Galaxy S24 Ultra | 6.8” Dynamic LTPO AMOLED 2X | Snapdragon 8 Gen 3 |
| iPhone 16 Pro Max | 6.9” Super Retina XDR OLED | A18 Pro |
| Google Pixel 9 Pro | 6.3” LTPO OLED | Tensor G4 |
| Xiaomi 14 Ultra | 6.73” LTPO AMOLED | Snapdragon 8 Gen 3 |
| OnePlus 13 | 6.82” LTPO AMOLED | Snapdragon 8 Elite |
| Motorola Moto G71 | 6.4” AMOLED | Snapdragon 695 |
২০২৫ সালের শেষে 5G স্মার্টফোন মার্কেটের সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ ট্রেন্ড
২০২৫ সালের শেষে বাংলাদেশে 5G স্মার্টফোন বাজার উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে, দেশের প্রধান শহরগুলোতে সীমিত পরিসরে 5G সেবা চালু হলেও, আগামী মাসগুলোতে এই সেবা আরও বিস্তৃত হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৫ সালের শেষে 5G স্মার্টফোনের বাজার অন্তত ৩০% বৃদ্ধি পাবে, যা প্রযুক্তির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহের প্রতিফলন।
বর্তমানে, প্রায় প্রতিটি স্মার্টফোন ব্র্যান্ড বিশেষ করে – Samsung, Apple, Xiaomi, OnePlus; তাদের নতুন মডেলগুলোতে 5G ফিচার অন্তর্ভুক্ত করছে। উদাহরণস্বরূপ, iPhone 17 Air এবং Vivo Y400 5G-এর মতো বাজেট-বান্ধব ফোনগুলোতে 5G কানেক্টিভিটি পাওয়া যাচ্ছে, যা তরুণ ক্রেতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এছাড়া, বর্তমানের প্রায় সকল স্মার্টফোনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) সংযোজন একটি উল্লেখযোগ্য প্রবণতা হয়ে উঠেছে। ২০২৫ সালে, স্মার্টফোন নির্মাতারা তাদের ডিভাইসে উন্নত AI ফিচার অন্তর্ভুক্ত করছে, যা ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা উন্নত করছে। উদাহরণস্বরূপ, OnePlus-এর OxygenOS 6-এ Google-এর Gemini AI সহ Mind Space ফিচার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য আরও স্মার্ট এবং ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
শেষ কথা
২০২৫ সালে বাংলাদেশের ৫জি যুগের শুরুতে, মোবাইল মার্কেটে দ্রুত এগিয়ে এসেছে Samsung S24 Ultra। প্রিমিয়াম স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্য এটি এখনও অন্যতম সেরা ৫জি স্মার্টফোন হিসেবে বিবেচিত। দ্রুত ৫জি সংযোগ, উন্নত পারফরম্যান্স এবং AI ফিচারের সমন্বয় এই ফোনকে শুধু দ্রুত ইন্টারনেটের জন্য নয়, বরং স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
বর্তমানে যদিও ৫জি নেটওয়ার্ক দেশের কয়েকটি প্রধান শহরে সীমিত, তবে এর সম্প্রসারণ দ্রুত হচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ এবং বাজেট-বান্ধব ৫জি ফোনের সাথে ফ্ল্যাগশিপ ডিভাইসের সমন্বয় এই যুগকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করেছে। Samsung, Apple, Xiaomi ও OnePlus ব্র্যান্ডের নতুন মডেলগুলো শুধু দ্রুত ইন্টারনেটই নয়, উন্নত পারফরম্যান্স ও AI সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডিজিটাল ভবিষ্যতের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উঠে আসছে। এখনই সময় সঠিক ফোন বেছে নিয়ে এই নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার।
The post ৫জি যুগের শুরু! ২০২৫ সালের সেরা 5G স্মার্টফোন এখন বাংলাদেশে appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments