সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম. কামাল হোসেন ব্যাংকটির শীর্ষ পদে থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি শক্তিশালী হুন্ডি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করতেন এবং এর মাধ্যমে বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। দুটি ‘ব্যবসায়ী’ প্রতিষ্ঠানকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এই অবৈধ কার্যক্রম চালানো হতো। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কামাল হোসেন অবৈধ হুন্ডি কার্যক্রম, দুর্নীতি, এবং ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে যে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন, তা দিয়ে দেশে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে সম্পদ গড়েছেন। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে হিসাব খোলার সময় তিনি অর্থের উৎস সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী একটি গুরুতর অপরাধ।
যেভাবে চলতো হুন্ডি নেটওয়ার্ক:
বিএফআইইউর প্রতিবেদন এবং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সূত্র অনুযায়ী, কামাল হোসেনের আন্তর্জাতিক হুন্ডি নেটওয়ার্কের সাথে শক্তিশালী যোগাযোগ ছিল। দেশের বাইরে টাকা পাঠানো বা বিদেশ থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে টাকা আনার প্রয়োজন হলে গ্রাহকরা তার শরণাপন্ন হতেন। এই কাজের জন্য তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন পেতেন।
তবে বড় অঙ্কের অর্থ সরাসরি লেনদেন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তিনি দুটি প্রতিষ্ঠান—এবি ইলেকট্রনিকস এবং আনিরা ইন্টারন্যাশনাল-এর ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতেন। ব্যবসায়িক হিসাব হওয়ায় এসব অ্যাকাউন্টে বড় লেনদেন হলেও তা সহজে সন্দেহের আওতায় আসত না।
আনিরা ইন্টারন্যাশনাল: ২০১৭ সালের মার্চে কামাল হোসেন এমডি হওয়ার ঠিক দুই মাস পর ব্যাংকটির বাংলামটর শাখায় এই হিসাব খোলা হয়। আশ্চর্যজনকভাবে, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর কামাল হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে এই অ্যাকাউন্টে আর কোনো লেনদেন হয়নি। বিএফআইইউ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. আশরাফ উদ্দীন এবং কামাল হোসেন পরীবাগের একই ভবনে বসবাস করেন।
এবি ইলেকট্রনিকস: ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার এক সাবেক কর্মকর্তা তদন্ত দলকে জানিয়েছেন, কামাল হোসেন এমডি থাকাকালীন এই প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যবহার করে সারাদেশে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। সরেজমিনে রাজধানীর সুইমিংপুল স্টেডিয়াম মার্কেটে এবি ইলেকট্রনিকসের ঠিকানায় গিয়ে দেখা যায়, এটি একটি ছোট সার্ভিসিং সেন্টার, যার মাধ্যমে এত বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন প্রায় অসম্ভব।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য এড়ানোর চেষ্টা:
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা গণমাধ্যমকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এবি ইলেকট্রনিকসের মালিক আবু বকর সিদ্দিক অ্যাকাউন্টের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘আপনি সাংবাদিক; অ্যাকাউন্টের বিষয়ে কেন জানতে চান?’ এবং পরে ফোন কেটে দেন। অন্যদিকে, কামাল হোসেন এবং আনিরা ইন্টারন্যাশনালের মালিক আশরাফ উদ্দীনের সাথে তাদের পরীবাগের বাসায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
বিএফআইইউর এই প্রতিবেদনটি দেশের ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে, যেখানে শীর্ষ কর্মকর্তারা নিজেরাই অর্থ পাচারের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে আর্থিক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
The post সাউথইস্ট ব্যাংককে এমডির হুন্ডি নেটওয়ার্ক: ব্যাংককে ব্যবহার করে অর্থ পাচার appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments