শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে আবারও মোবাইল ফোনে পাঠানো হচ্ছে এসএমএস। এতে যোগাযোগের জন্য একটি ফোন নম্বর দেওয়া থাকছে। আগ্রহী কেউ কল করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে কথা বলছেন এক ব্যক্তি। এরপর টাকা পাঠানোর নামে কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর জেনে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ।
কিছুদিন বিরতির পর ফের তৎপর হয়েছে এই প্রতারকরা। তাদের কৌশল সম্পর্কে জানতে শিক্ষার্থীর অভিভাবক সেজে ফোনে কথা বলে জানা যায়, টাকা পাঠানোর নামে পুরনো কায়দায় তারা ফাঁদে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী তথ্য দিলেই সর্বনাশ।
এর আগে এভাবে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অভিযানে বেশ কয়েকজন ধরাও পড়ে। এর মধ্যে আশিকুর রহমান, সাইফুল সর্দার ও মোক্তার হোসেনের চক্র অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ‘এ ধরনের প্রতারণার কথা শুনিনি। খোঁজ নিয়ে দেখব, পুলিশকেও ব্যবস্থা নিতে বলব। মেসেজের সূত্র ধরে আশা করি তারা জড়িতদের শনাক্ত করতে পারবে। পাশাপাশি সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
সংশ্নিষ্টরা জানান, সহজসরল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাই প্রতারক চক্রের টার্গেট। তারা বিভিন্ন উপায়ে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে একটি মেসেজ পাঠায়। তাতে লেখা থাকে- ‘প্রিয় শিক্ষার্থী, করোনাভাইরাসের কারণে তোমাদের উপবৃত্তির ৪২০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। টাকা গ্রহণের জন্য নিল্ফেম্নাক্ত শিক্ষা বোর্ডের নম্বরে যোগাযোগ করুন।’ এমন এসএমএসের শেষে ‘শিক্ষামন্ত্রী’ কথাটিও লেখা থাকে।
এমন মেসেজ পাওয়ার পর এই প্রতিবেদক তাদের দেওয়া ফোন নম্বরে (০১৯৩৭৮৬৫৩৬৬) যোগাযোগ করেন। তবে একাধিকবার কল করা হলেও প্রথমে কেউ রিসিভ করেননি। পরদিন ওই নম্বর থেকে কল করে বলা হয়, ‘হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। আপনি এই নম্বরে উপবৃত্তির টাকা নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন?’ জবাবে ‘হ্যাঁ’ বলা হলে অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘টাকা বিকাশের মাধ্যমে নিতে পারবেন। পারসোনাল বিকাশ নম্বর আছে?’ আছে জেনে তিনি বলেন, ‘আপনার কাছে অন্য কোনো ফোন নম্বর আছে? সেই নম্বরটা বলেন, আমি কল দিতেছি।’ সেই নম্বর জেনে নিয়ে তিনি অপর একটি মোবাইল ফোন (০১৩২২৪৬৪৫৩৫) নম্বর থেকে কল করেন। এরপর সেই নম্বরে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আপনার বিকাশ নম্বরে কোনো মেসেজ পাঠানো হলে সেই মেসেজ দেখে বলতে পারবেন?’ সম্মতি জানালে তিনি আবারও বিকাশ নম্বরটি জানতে চান। পরীক্ষামূলকভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্ট নেই এমন একটি নম্বর বলা হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি জানান, ওই নম্বরে বিকাশ নেই। পরে সঠিক বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর বলা হলে তারা একটি কোড নম্বর পাঠায় এবং সেটি জানতে চায়। এর মাধ্যমে তারা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার প্রক্রিয়া শুরু করে- এ তথ্য জানা থাকায় ওই ব্যক্তিকে আর কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
তবে এর আগে গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে সিআইডি সূত্র জানায়, প্রতারক চক্রের সদস্যরা মানুষের আস্থা অর্জনের উদ্দেশ্যে বলে- মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ বা অন্যান্য) অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর কাউকে বলবেন না। তবে তারা ওই পিন নম্বরের সঙ্গে নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা যোগ-বিয়োগ বা গুণ-ভাগ করে ফল জানাতে বলত। এভাবে তারা পিন কোড জেনে যেত এবং অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা কৌশলে স্থানান্তর করে নিত। পরে নিজেদের ব্যবহূত ফোন নম্বরগুলো পাল্টে নতুন নম্বর দিয়ে ফের প্রতারণা শুরু করত।
The post আবারও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে উপবৃত্তির ফাঁদ appeared first on Techzoom.TV.
 
 
 

0 Comments