দেশের সম্ভাবনাময় ই-কমার্স খাত আজ নানা অনিয়ম, প্রতারণা আর অবিশ্বাসের ভেতর দিয়ে হাঁটছে। অথচ এই খাতের শৃঙ্খলা ও উন্নয়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) নিজের ভূমিকা কতটা পালন করেছে, তা নিয়ে আজ ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে।
আমাদের দেশে এ খাতে ছোট-বড় মিলিয়ে পাঁচ লাখের মতো উদ্যোক্তা রয়েছেন। ২০২১ সালে ই-কমার্স বাজারের আকার ছিল প্রায় ৫৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। গবেষণা সংস্থা লাইটক্যাসল পার্টনার্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার দাঁড়াবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। ডাবলিনভিত্তিক বাণিজ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস ডটকমের মতে, ২০২৬ সালের মধ্যে তা প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বাজারে পরিণত হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের একটি প্রধান সমস্যা তারা জোয়ারে ভাসতে পছন্দ করে। যখন যার জোয়ার তখন তার পেছনেই ছোটে। ফলে কিছু অসাধু লোক বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। এর ফলে কিউকম, ধামাকা শপিং, আলেশা মার্ট, ই-অরেঞ্জ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুমবুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার পরও পণ্য বুঝিয়ে না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মূলত গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট করার জন্য এ কোম্পানিগুলোই বড় ভূমিকা পালন করেছে।
বিশ্বাস ভেঙেছে, বাজার হারিয়েছে
ই-কমার্সের সোনালী দিন এসেছিল ২০২০-২১ সালের দিকে। হাজারো তরুণ উদ্যোক্তা অনলাইনে ব্যবসার স্বপ্ন বুনছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু প্রতিষ্ঠানের বিশাল অর্ডার নিতে গিয়ে ডেলিভারি দিতে ব্যর্থ হওয়া, প্রতারণামূলক ‘ক্যাশব্যাক অফার’ এবং কোটি কোটি টাকা গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পুরো খাতটাই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে।
এমন সংকটকালে ই-ক্যাবের ভূমিকা ছিল কার্যত নীরব। অভিযোগ আছে, অনেক প্রতারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়ে ই-ক্যাব বরং নির্লিপ্ত থেকেছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা দিয়েছিল বলেও দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
কোথায় ছিল ই-ক্যাবের নজরদারি?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই ই-ক্যাবের অন্যতম দায়িত্ব ছিল। কিন্তু প্রতারণামূলক ব্যবসায় জড়িত অনেক প্রতিষ্ঠান ই-ক্যাবের সদস্য হয়েও বছরের পর বছর অনিয়ম চালিয়ে গেছে। ই-ক্যাব তাদের অডিট বা যাচাই-বাছাই করেনি, বরং সদস্যপদ দিয়েই বৈধতার ছাপ দিয়েছে।
এ নিয়ে গ্রাহক অধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুলেছে— যদি ই-ক্যাব ঠিকমতো নজরদারি করত, তাহলে ধামাকা, ই-অরেঞ্জ, কিউকম বা আরও বহু প্রতিষ্ঠানের নামে কোটি কোটি টাকার প্রতারণা ঘটত না।
দায় এড়াতে ব্যস্ত?
আজ যখন গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত, হাজার হাজার কোটি টাকা অনিশ্চিত হয়ে গেছে, তখন ই-ক্যাব প্রায় সব দায় সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাঁধে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ ই-কমার্স খাতের সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ই-ক্যাবের ভূমিকা প্রশ্নাতীতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ই-কমার্সের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হলে আগে ই-ক্যাবকেই নিজেদের দায় স্বীকার করে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
The post দেশের ই-কমার্স ধ্বংসে ই-ক্যাবের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন appeared first on Techzoom.TV.
0 Comments