অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করার সহজ কৌশল

ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত তথ্য আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ডাটা ব্রোকার সাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা প্রকাশ্য সরকারি নথির মাধ্যমে বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর ও চাকরির তথ্য সহজেই বের করা যায়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু ধাপ অনুসরণ করলে অনলাইনে নিজের পরিচয় অনেকটাই সুরক্ষিত রাখা সম্ভব—

ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে কীভাবে
প্রতিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করলে মানুষের একটি ‘ডিজিটাল প্রোফাইল’ তৈরি হয়। এতে থাকে কেনাকাটার অভ্যাস, আগ্রহ, কর্মস্থল এবং অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য। হোয়াইটপেজেস, স্পোকিও বা পিপলফাইন্ডারের মতো ডাটা ব্রোকার কোম্পানিগুলো এসব তথ্য সরকারি নথি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন ডিরেক্টরি থেকে সংগ্রহ করে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা লিংকডইনে প্রতিটি পোস্ট, মন্তব্য বা প্রোফাইল আপডেটের ফলে তথ্য অনলাইনে জমা হয়। এমনকি অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার পরও অনেক সময় ডাটা ব্রোকার সাইটে বা সংরক্ষিত পাতায় তথ্য থেকে যায়। ভোটার তালিকা, জমির দলিল বা আদালতের নথিও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

এসব তথ্য খুঁজে বের করার উপায়

নিজের তথ্য কোথায় আছে তা জানা খুব জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, পুরো নাম, ফোন নম্বর বা ই-মেইল দিয়ে গুগলে সার্চ করতে হবে। নাম উদ্ধৃতি চিহ্নে (“নাম”) দিলে ফলাফল আরো নির্ভুল হয়। গুগলের “রেজাল্টস অ্যাবাউট ইউ” টুল ব্যবহার করেও তথ্য কোথায় আছে জানা যায় এবং মুছে ফেলার আবেদন করা যায়।

ডাটা ব্রোকার সাইটেও সরাসরি খোঁজ নেয়া জরুরি। অনেক সাইট বিনা খরচে তথ্য দেখার সুযোগ দেয়, তবে মুছে ফেলার প্রক্রিয়া জটিল। কোথাও আনুষ্ঠানিক ‘অপ্ট-আউট’ ফর্ম পূরণ করতে হয়, আবার কোথাও সাময়িকভাবে তাদের সেবার গ্রাহক হতে হয়। কেউ চাইলে ইনকগনি, ডিলিটমি বা ওয়ানরেপের মতো টুল ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য খুঁজে বের ও মুছে ফেলতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ ধরনের সেবার জন্য সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়।

তথ্য মুছে ফেলা যাবে কীভাবে

যেখানে তথ্য পাওয়া গেছে, সেখান থেকে অপ্ট-আউট বা প্রাইভেসি ফর্ম পূরণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে একাধিক ধাপ ও পরিচয় যাচাই প্রয়োজন। নিষ্ক্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টও ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ পুরনো পোস্ট ও ছবি ডাটা স্ক্র্যাপারের হাতে পড়তে পারে। হারানো অ্যাকাউন্ট খুঁজে পেতে ‘ডেসিট.মি’ টুল ব্যবহার করা যায় এবং পরে সেগুলো মুছে ফেলা যায়।

ভবিষ্যতে তথ্য সুরক্ষার উপায়

শুধু পুরনো তথ্য সরানো নয়, নতুনভাবে তথ্য ফাঁস হওয়া ঠেকানোও জরুরি। সক্রিয় অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি সেটিংস নিয়মিত পর্যালোচনা করা জরুরি। কেবল বিশ্বস্ত ব্যক্তি যেন কনটেন্ট দেখেন তা নিশ্চিত করতে হবে। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু এবং শক্তিশালী, আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। বাড়ির ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ভ্রমণ পরিকল্পনা অনলাইনে প্রকাশ না করা উত্তম।

তথ্য সুরক্ষা একবারের কাজ নয়; এটি চলমান প্রক্রিয়া। মাঝে মাঝে গুগলে নিজের নাম খুঁজে দেখা এবং ডাটা ব্রোকার সাইটে নতুন তালিকা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা উচিত। চাইলে গুগল অ্যালার্টস ব্যবহার করে নোটিফিকেশনও পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধৈর্য, সচেতনতা ও সঠিক টুল ব্যবহার করলে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য কমানো সম্ভব এবং প্রতারক ও বিপণনকারীদের হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।

The post অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করার সহজ কৌশল appeared first on Techzoom.TV.

Post a Comment

0 Comments