রূপালী ব্যাংকে অস্থিরতা: সাবেক ও বর্তমান এমডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির পৃথক অনুসন্ধান

রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান—উভয় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বিরুদ্ধেই অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ ওঠায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে। অন্যদিকে, বর্তমান এমডি কাজী ওয়াহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও সিন্ডিকেট করে পদোন্নতি ও ঋণ জালিয়াতির একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে।

সাবেক এমডি ওবায়েদ উল্লাহর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ:

দুদক সূত্রে জানা গেছে, রূপালী ব্যাংকের সাবেক এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংক এবং আমানতকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেনের বিষয়টিও এই অনুসন্ধানের আওতায় আনা হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ওবায়েদ উল্লাহর কর্মকালে সংঘটিত একাধিক আর্থিক অনিয়ম নিয়ে একটি বিশদ প্রতিবেদন দুদকে পাঠালে এই অনুসন্ধান শুরু হয়। এর আগে গত ১৫ই জুলাই বিএফআইইউ ওবায়েদ উল্লাহ, তার স্ত্রী এবং তিন সন্তানের ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল।

উল্লেখ্য, ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ রূপালী ব্যাংকের আগে সোনালী ব্যাংকের এমডি ছিলেন। গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলে তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান এবং ১১ মাস পর গত জুলাইয়ে পদত্যাগ করেন। এর আগেও, অগ্রণী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) থাকাকালীন ১৮৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২৫শে সেপ্টেম্বর দায়ের করা দুদকের একটি মামলায় তিনি অন্যতম আসামি।

বর্তমান এমডি কাজী ওয়াহিদুলের বিরুদ্ধেও গুরুতর অভিযোগ:

সাবেক এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না নিতেই রূপালী ব্যাংকের বর্তমান এমডি কাজী ওয়াহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির একটি বিশদ অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে:

  • পদোন্নতি সিন্ডিকেট: এমডি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েই তিনি অযোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন, যার ফলে অন্তত ৭০ শতাংশ যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অভিযোগে ডিএমডি পারসুমা আলম, জিএম আবুল নাসের মাসুদ, জিএম মোহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা এই সিন্ডিকেটের সদস্য বলে দাবি করা হয়।
  • অনিয়মিত ঋণ অনুমোদন: অডিট আপত্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি রূপালী ব্যাংকের গুলশান শাখার ‘মাস টেক্স’ নামক এক গ্রাহককে পাঁচ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই গ্রাহকের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে এবং তিনি বর্তমানে পলাতক।
  • এলাকাপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার: অভিযোগে আরও বলা হয়, কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম নিজ এলাকা নারায়ণগঞ্জের বেশ কিছু এনজিওকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনে সরাসরি প্রভাব খাটিয়েছেন।
  • রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা: এমডি হওয়ার আগে তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রূপালী ব্যাংক শাখার নেতৃত্বে ছিলেন এবং পরে সেখান থেকে নিজের নাম কাটিয়ে নেন। জুলাই অভ্যুত্থানে সহিংসতার ঘটনায় অর্থায়নের অভিযোগে দায়ের করা একটি মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর ও ধারাবাহিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় প্রতিষ্ঠানটির সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

The post রূপালী ব্যাংকে অস্থিরতা: সাবেক ও বর্তমান এমডির বিরুদ্ধে দুর্নীতির পৃথক অনুসন্ধান appeared first on Techzoom.TV.

Post a Comment

0 Comments