দুর্নীতি কমাতে সরকারি অফিসগুলোতে নাগরিকের দৈহিক উপস্থিতি বা ‘ফিজিক্যাল কন্ট্রাক্ট’ যত দ্রুত সম্ভব কমিয়ে আনার অথবা পুরোপুরি বন্ধ করার ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দুর্নীতি কমাতে ‘অনলাইন সার্ভিস’ এর কথা উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন ‘সরকারি সব সেবা অনলােইনে আনতে হবে।’ খেদ প্রকাশ করেছেন ফ্রিল্যান্সারদের পেপ্যাল না আসা এবং বিটিআরসি’র স্বাধীন ভাবে কাজ করতে না পারার বিষয়ে।
দেশে আড়াই লাখ ফ্রিল্যান্সার থাকলেও এটি মনিটাইজেশন করা যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের মেইনস্ট্রিমে আনতে পারি নি। পেপ্যালের মতো প্লাটফর্ম না থাকায় তারা টাকাও আনতে পারছে না। একজন ফ্রিল্যান্সার যদি মাসে এক-দুই হাজার ডলার আয় করে তাহলে কেন সে তার টাকা বাইরে পাঠাতে পারবে না। তারা টাকা আনতে পারলে, বাইরেও দিতে পারবে। দরজা অর্ধেক খুলে অর্ধেক বন্ধ রাখা যাবে না। উন্মুক্ত রাখতে হবে। তাহলেই বিনিয়োগ আসবে। বিনিয়াগ পেতে হলে ট্রেড ইন পোস্ট ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকতে হবে। কোনো এক-তিনজন লোক বিডা চালাতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনতা দিতে হবে। অটোনমি নয়। একইভাবে বিটিআরসি খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এটি যদি পেশাদারিত্ব ও স্বাধীন ভাবে কাজ করে তাহলে আইটি খাতের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগবে। তৈরি থাকা আইটি রিলেটেড ব্যবসা বিকশিত হবে। অথচ আমরা এখনো ভারো কল সেন্টার করতে পরিনি। ডেটা সেন্টার করতে পারিনি। তাই আমরা আইটি রিলেটেড বিজনেস নিয়ে বিরাট পরিকল্পনা নিয়ে আসছি।
২৭ অক্টোবর, সোমবার ঢাকার গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫’-এর প্রথম দিনে উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। দেশের ব্যাংকে তারল্য সঙ্কট এবং সঞ্চয় কমে যাওয়া আইটি ব্যবসায় মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আমির খসরু বলেন, সেভিংস বাড়াতে আমাদের আইটি প্রতিষ্ঠানকে ক্যাপিটেল মার্কেটে নিয়ে যেতে হবে। এখান থেকে ইক্যুইটি ও বন্ড বিক্রি করতে হবে। কেননা আমরা এখন ফ্রন্টিয়ার মার্কেট থেকে ইমার্জিং মার্কেটে যেতে হবে। এজন্য আমি অনলাইন ট্রেডিং করেছি।
তিনি বলেন, ব্যুরিয়ক্রাসির কাজ হলো এক্সিকিউট করা। পলিসি করা তাদের কাজ নয়।
আমির খসরুর প্রশ্ন, আমাদের কেন সেবা পেতে সরকারি অফিসে যেতে হবে? আমাদের কেন ব্যুরিওক্র্যাটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হতে হবে? সেবা পেতে কেন সরকারি অফিসে গিয়ে বসে থাকতে হবে। অফিসারের পেছনে কেন দৌড়াতে হবে? কেন আমরা আনলাইনে করছি না?
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। ই-গভার্নেন্সে একেবারেই ফিজিক্যাল কন্ট্যাক্ট বন্ধ করতে কাজ করছি। ফিজিক্যাল কন্ট্রাক্ট যত কমাতে পারবেন তত দুর্নীতি কমবে। সবকিছু অনলাইনে করা সম্ভব হলে কেউ আর সরকারের অফিসে যাবে না। বিশ্বের কোনো সভ্য দেশে নাগরিকদেরকে ইলেকট্রিসিটি বিল, টেলিফোন বিল বা পাসপোর্ট নবায়নের মতো সাধারণ সেবার জন্য সরকারি অফিসে দৌড়াতে হয় না।
অর্থনৈতিক সংস্কার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাতন্ত্রকে ঢেলে সাজানোর ওপর জোর দিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমলাদের জবাবদিহি করার চেয়ে তাদের কাজ ও ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে ‘সিরিয়াস ডিরেগুলেশন’ এর মাধ্যমে দুর্নীতি ও জটিলতা বহুলাংশে কমানো সম্ভব।
কর্মসংস্থান ও জিডিপি বাড়াতে শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং নয়, ক্রীড়া, থিয়েটার ও আইটি খাতে বিনিয়োগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি জেলায় স্পোর্টস কমপ্লেক্স এবং ঢাকায় থিয়েটার ডিস্ট্রিক্ট তৈরি করা গেলে লাখ লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
আমীর খসরু চৌধুরী বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক মডেল ‘একটি সেকশনের জন্য কাজ করেছে, সাধারণ মানুষের জন্য নয়’। তাই একটি নতুন অর্থনৈতিক ভিশন দরকার। ‘অর্থনীতির গণতন্ত্রীকরণ’ এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি নাগরিকের অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ ও সুফল পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। মেগা প্রজেক্টের পাশাপাশি গ্রামের কারিগর ও মৃৎশিল্পীদের মতো এসব মানুষের জন্য ইনপুট সাপোর্ট, ডিজাইনিং সহায়তা, ক্রেডিট সাপোর্ট, ব্র্যান্ডিং এবং অনলাইন সেলিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিতে হবে। তারা বাড়ি বসেই সব করবে। কারো কাছেই যেতে হবে না। এখানে সরকারকে বিনিয়োগ করতে হবে। সৃজনশীল অর্থনীতির বিকাশ ঘটাতে হবে।
The post পেপ্যাল না আসা ও বিটিআরসি’র স্বাধীনতা নিয়ে খেদ প্রকাশ আমির খসরুর appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments