গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে শ্রমিক শোষণ ও হয়রানির অভিযোগ

একসময় শ্রমিক শোষণ, অধিকার হরণ এবং ইউনিয়ন করতে না দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের জিএসপি সুবিধা বাতিল করেছিল। শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড, রানা প্লাজা ও তাজরীন ফ্যাশনসের মতো ভয়াবহ ট্র্যাজেডির পর গত এক দশকে বিদেশি ক্রেতা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে পোশাক শিল্প মালিকরা শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে কিছুটা হলেও নজর দিতে বাধ্য হয়েছেন। বেতন কাঠামো ও কর্মপরিবেশে কিছুটা উন্নতি এসেছে। কিন্তু দেশের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে যখন একই ধরনের শ্রমিক শোষণের অভিযোগ ওঠে এবং বছরের পর বছর ধরে তা চলতে থাকে, তখন রাষ্ট্রের ভূমিকা এবং মূল বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে নরওয়ের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

ভুক্তভোগী শ্রমিক এবং সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, গ্রামীণফোন বছরের পর বছর ধরে শ্রমিকদের অধিকারকে উপেক্ষা করে আসছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের পরিবর্তে শ্রমিকদের হয়রানি করতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে ব্যবহার করার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। প্রশ্ন হলো, একটি বিদেশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান কোন ক্ষমতাবলে দেশের আইন ও শ্রমিকদের অধিকারকে এভাবে উপেক্ষা করার সাহস পায়?

যুক্তরাষ্ট্র পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে শ্রমিক অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে জিএসপি সুবিধা বাতিল করতে পারলে, গ্রামীণফোনের মতো একটি নরওয়েজিয়ান কোম্পানির কারণে যখন বাংলাদেশি নাগরিক, শ্রমিক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হয়রানির শিকার হয় বা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সেই দায় কি নরওয়ে এড়াতে পারে?

সমালোচকরা বলছেন, এই সমস্যার গভীরে রয়েছে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। অভিযোগ রয়েছে, শুধু দেশীয় প্রতিষ্ঠানই নয়, গ্রামীণফোনের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ পদেও এমন অনেক সুবিধাভোগী ব্যক্তি রয়েছেন, যাদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, বড় পদে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন, ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণ এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন করার পরও কেন তাদের দলীয় সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন হয়? এই সংশ্লিষ্টতা কি তাদের অনিয়ম ও শোষণের বিরুদ্ধে এক ধরনের সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে?

যখন একটি প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের ঘাম ও রক্তের ওপর ভিত্তি করে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করে, কিন্তু সেই শ্রমিকদেরই ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তখন তা কেবল শোষণই নয়, এটি শ্রমিকদের রক্তের সাথে বেঈমানির শামিল। দেশের পোশাক শিল্প যদি শত সীমাবদ্ধতার পরেও শ্রমিক অধিকারের পথে হাঁটতে পারে, তবে গ্রামীণফোনের মতো একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান কেন পারবে না—এই প্রশ্ন আজ উঠছে জোরালোভাবে।

The post গ্রামীণফোনের বিরুদ্ধে শ্রমিক শোষণ ও হয়রানির অভিযোগ appeared first on Techzoom.TV.

Post a Comment

0 Comments