অবৈধভাবে আমদানি করা, নকল ও চোরাই মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধে আবারও ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এর আগে ২০২১ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এবং ২০২৪ সালে চালু হলেও নানা জটিলতায় ব্যবস্থাটি পুরোপুরি কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার আরও কঠোরভাবে এটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
NEIR হলো একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা যেখানে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত প্রতিটি হ্যান্ডসেটের IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর, গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) এবং তার ব্যবহৃত সিম কার্ডের নম্বর একসঙ্গে সংযুক্ত বা ট্যাগিং করা থাকে।
প্রযুক্তি বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, চোরাই হ্যান্ডসেটে অবাধ বাজারজাতের কারণে দেশি নির্মিত হ্যান্ডসেটের উৎপাদনে ধ্বস নেমেছে। উৎপাদন কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। এনইআইআর পুরোপুরি কার্যকর হলে নেটওয়ার্কে সিম ও হ্যান্ডসেট লক করার সুবিধা পাওয়া যাবে বলে মনে করেন মোবাইল অপারেটররা। এই সুবিধা নিশ্চিত করা হলে নেটওয়ার্ক থেকে চোরাই হ্যান্ডসেট বিচ্ছিন্ন করা যাবে। অন্যদিকে, কিস্তি ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধায় ক্রেতার কাছে স্মার্টফোন সহজলভ্য করা সম্ভব।
প্রথমবার চালুর ঠিক তিন বছর পর আবারও চালু হচ্ছে মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধন (এনইআইআর) ব্যবস্থা। সরকার ২০২১ সালের ১ জুলাই প্রথমবারের মতো এই ব্যবস্থা চালু করে। সে সময় অনেক মোবাইল ফোন সেট নিবন্ধনও করা হয়। এনইআইআর পদ্ধতি চালুর পর দেশে অবৈধ মোবাইল ফোন প্রবেশের সংখ্যা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে গিয়েছিল। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছিল দেশের মোবাইল ফোনের উৎপাদকদের মাঝে। ফোন সেট নিবন্ধনের আগে গ্রে মার্কেটের (অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা মোবাইল) পরিধি মোট মোবাইল বাজারের অর্ধেক ছাড়িয়ে গিয়েছিল (৫৩ শতাংশ)। কিন্তু এই পদ্ধতি চালু হলে দেশে তৈরি এবং বৈধ চ্যানেলে আসা মোবাইল ফোন কিনতে বাধ্য হন ক্রেতারা। হঠাৎ প্রায় শূন্য হয়ে যায় গ্রে মার্কেট।
অবৈধ হ্যান্ডসেট আমদানি বন্ধ: কর ফাঁকি দিয়ে বিপুল পরিমাণ মোবাইল ফোন বাজারে প্রবেশ করে, সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারায়। NEIR চালু হলে শুধুমাত্র বৈধভাবে আমদানি করা ফোনগুলোই নেটওয়ার্কে থাকবে।
মোবাইল ফোন চুরি রোধ: চুরি বা ছিনতাই হওয়া ফোন অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। ফোনটি চুরি হওয়ার পর অভিযোগ করা হলে সেটির IMEI নম্বর কালো তালিকাভুক্ত করা হবে, ফলে কোনো সিম দিয়েই ফোনটি আর সচল করা যাবে না।
অপরাধ দমন: মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সংঘটিত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শনাক্ত করা সহজ হবে।
দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা: দেশে মোবাইল ফোন সংযোজন ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একটি সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ পাবে।
মোবাইল ফোন কেনার আগে সেটি বৈধ কিনা, তা সহজেই যাচাই করা যায়। মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<space>১৫ ডিজিটের IMEI নম্বর লিখে ১৬০০২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফোনের বৈধতা সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে। ফোনের IMEI নম্বর জানতে ডায়াল করুন *#০৬#। NEIR ব্যবস্থাটি সম্পূর্ণরূপে চালু হলে দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০২১ সালে অবৈধ মোবাইল বন্ধে বিটিআরসি হাঁকডাক দেয় কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কীভাবে যেন মিইয়ে যায়।এরপর ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি বিটিআরসির ঘোষণা ‘অতি শীঘ্রই অবৈধ মোবাইল নেটওয়ার্ক হতে বিচ্ছিন্ন করা হবে।’ নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি তখনও বিজ্ঞপ্তিতে জনসাধারণকে মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার আগে বৈধতা যাচাই করে কেনার অনুরোধ করে। ফলাফল ওই ২০২১ সালের মতোই। বিটিআরসি শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর করতে পারে না।
The post অবৈধ মোবাইল বন্ধে আবারও চালু হচ্ছে NEIR appeared first on Techzoom.TV.

0 Comments